সর্বশেষ

এখানে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা করার সুযোগ নেই: আনিসুল হক

/ চাপ আছে, সমাধানও সম্ভব /

প্রকাশ :


/ আনিসুল হক, আইনমন্ত্রী /

২৪খবরবিডি: 'বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তিনি এ ধরনের অভিযোগের পক্ষপাতহীন, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন।'

চার দিনের সফরে এসে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নানা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন মিশেল ব্যাচেলেট। তাঁর পর্যবেক্ষণের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মন্ত্রীসহ দেশের বিশিষ্টজন।


* জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের পরামর্শ কীভাবে দেখছেন?
 

আইনমন্ত্রী :মিশেল ব্যাচেলেটের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছিল। তাঁকেও আমাদের এখানকার যে অবস্থা, সেটা জানিয়েছি। বলেছি, কেউ যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিই। যেটা নারায়ণগঞ্জের ঘটনা (র‌্যাবের হাতে সাত খুন), সেটা বলেছি। আমরা তাদের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানে একটা প্রশ্ন এসেছে, নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা গঠন। আমি বলেছি, আমাদের আইনের মধ্যে যে তদন্তের কথা বলা আছে, সেখানে আমাদের যে তদন্তকারী সংস্থা আছে, সেগুলোকেই তদন্ত করার ক্ষমতা দেয়। এর বাইরে আমরা তদন্ত করতে পারব না। আর আন্তর্জাতিক তদন্তের কথা যেটা বলা হয়, সেটার ক্ষেত্রে বলব- বাংলাদেশ এ কটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। এখানে আইন ও আদালত আছে, এখানে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা করার সুযোগ নেই। আমরা আমাদের আইন দিয়েই চলব। তবে এখানে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন করেন, তাহলে সেগুলোর জবাব আমরা দেব।


* পরামর্শগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন কিনা?
 

আইনমন্ত্রী :মানবাধিকার এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। হস্তক্ষেপ বলব না, এর কারণ মিশেল ব্যাচেলেট আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা দেননি বা দাবি করেননি। আমি যেটা বলব, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের এ ব্যাপারটা নিরপেক্ষভাবে দেখা উচিত। আমার মনে হয়, কিছুটা পক্ষপাতিত্ব হয়েছে।


* সরকার পরামর্শগুলো গ্রহণের বিষয়ে কী ভাবছে?
 

আইনমন্ত্রী :মানবাধিকার লঙ্ঘন বাংলাদেশে হয় না। কোনো সিস্টেমেটিক মানবাধিকার লঙ্ঘনও বাংলাদেশে হয়নি। যদি কোনো ব্যক্তি এ রকম লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে তাঁর ব্যাপারে সরকার অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেবে এবং প্রস্তুত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আমাদের যা যা করা দরকার, আমরা তার সবই করব। এর কারণ, আসল মানবাধিকার লঙ্ঘন যেটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে; তখন কিন্তু এই জাতিসংঘ বা এখন যেসব মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা কথা বলছে, তারা কোনো কথা বলে নাই। এরপরও এই সরকার থেমে নাই। আজ যাঁরা মিশেল ব্যাচেলেটের কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন, আমি মনে করি- তাঁরা দেশের ক্ষতি করেছেন। তাঁরা যদি মনে করেন, বিদেশের দ্বারা বা এমন নালিশ করে সমাধান হতে পারে; যাঁরা এগুলো করছেন, তাঁরা যদি এর মাধ্যমে নিজেদের ইয়ে (গুরুত্বপূর্ণ) মনে করেন, তাহলে তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই- আমরা (বাংলাদেশ) জলে ভেসে আসি নাই। আমরা একটি স্বাধীন দেশ। ৩০ লাখ শহীদ এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা নিতে পারি।

 

এখানে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা করার সুযোগ নেই: আনিসুল হক


মিশেল ব্যাচেলেটের পরামর্শ কি আমাদের তদন্ত সংস্থার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করেছে?
 

আইনমন্ত্রী :আমাদের যে তদন্ত সংস্থা রয়েছে, তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তোলে, তাহলে আমরা দেখতে রাজি আছি। তবে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের কাছে এরই মধ্যে ৭৬ ব্যক্তি নিখোঁজের (গুম) একটি তালিকা এসেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে তদন্ত করেছি। তাদের (নিখোঁজ) প্রত্যেকের বাসায় গিয়ে পুলিশ খোঁজ নিয়েছে। এটা যখন করা হলো, তখন কিন্তু আবারও কিছু মানবাধিকার সংগঠন ও বিদেশি গণমাধ্যম জাতিসংঘের কাছে নালিশ করেছে- নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে। সেটার সত্যতা-অসত্যতা যাচাই করতে না গিয়ে তখন আমরা জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের বলেছি, ঠিক আছে, বাসায় গেলে যদি পরিবারগুলো আতঙ্কিত হন, তাহলে বাসায় না গিয়ে আমরা তদন্ত করব এবং সেটা হচ্ছে। এরপরও যদি বাধা দেওয়া হয়, তাহলে তদন্তকারী সংস্থাগুলো কাজ করবে কীভাবে!


* দেশি-বিদেশি কোনো যড়যন্ত্র দেখছেন কিনা?
 

আইনমন্ত্রী :অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখানেও হতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কিছু না পাওয়া পর্যন্ত বিষয়টি প্রকাশ করা ঠিক হবে না।


* পরামর্শগুলো উপেক্ষা করলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ চাপে পড়বে কিনা?
 

আইনমন্ত্রী :মিশেল ব্যাচেলেটের পরামর্শগুলো সংবাদ সম্মেলন করে দিয়ে গেছেন। আমরা লিখিতভাবে কিছু পাইনি। যদি পাই এবং তার যদি যৌক্তিকতা থাকে, অবশ্যই সেই যৌক্তিক বিষয়ে নজর দেব। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জোরালো বক্তব্য না দিয়ে মিশেল ব্যাচেলেট মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশকে স্বাধীন তদন্ত সংস্থা গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। এটা কীভাবে দেখছেন? 'মিশেল ব্যাচেলেট কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েই বাংলাদেশে এসেছিলেন, সেটাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত ছিল।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত